বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়

Table of Contents

বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়- বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ, এদেশের মানুষের প্রধান কর্মসংস্থান কৃষি নির্ভর। তাই কৃষি উন্নয়ন এর জন্য কৃষি মন্ত্রনালয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এ মন্ত্রনালয় কৃষির উপর গবেষণা, নতুন উদ্ভাবনী এবং সম্ভাবনাময় উচ্চ ফলনশীল বীজ তৈরি, এবং মাঠ পর্যায়ে কৃষকে প্রষিক্ষন দিয়ে কৃষি পন্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে কাজ করে থাকে।

কৃষি মন্ত্রণালয় এর প্রতিষ্ঠা সাল ও সংস্থার ইতিহাস

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ই মন্ত্রনালয়। সেই সময় থেকেই এ মন্ত্রণালয় দেশের কৃষি এবং কৃষকের বিভিন্ন উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এ মন্ত্রণালয় কৃষির আধুনিকীকরণ এবং কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঠিকানা

প্রধান কার্যালয় ঢাকা সচিবালয়ে যোগায়োগের ঠিকানা:

কৃষি মন্ত্রণালয়
১ নং ভবন (১ম তলা)
বাংলাদেশ সচিবালয়
পোস্ট কোড: ১০০০
ঢাকা, বাংলাদেশ।

কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা

কৃষি মন্ত্রণালয়ে বর্তমানে প্রায় ১,২০০ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কর্মরত আছেন। যারা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখা ও দপ্তরে কাজ করছে। কৃষি গবেষণা প্রতিষ্টান গুলোকে নির্দেশনা, তাদের মধ্যে সমন্বয় করে সকল প্রতিষ্ঠান সমূহকে পরিচালনা করা এ মন্ত্রনালয়ের কাজ করছে।

মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য

কৃষি মন্ত্রণালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের কৃষির উন্নয়ন করা এবং কৃষকদের জীবনমানের উন্নতি সাধন করা। এর মধ্যে রয়েছে:

  • খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: দেশের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করা।
  • কৃষি প্রযুক্তির আধুনিকীকরণ: উন্নত প্রযুক্তি ও কৃষি গবেষণার মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
  • কৃষকের সহায়তা: কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান, যেমন উন্নত বীজ, সার, ও কৃষি ঋণ প্রদান।
  • কৃষি সম্প্রসারণ: কৃষি সম্প্রসারণ সেবা প্রদান করে কৃষকদের উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের সংখ্যা

বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ও সংস্থা রয়েছে। গবেষনা কেন্দ্র এবং অধিদপ্তর একত্রে সংখ্যা আলাদা আলাদা। এখানে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কয়েকটি প্রধান দপ্তর ও তাদের প্রতিষ্ঠা সময়, সদস্য সংখ্যা, উদ্দেশ্য, এবং অধীনস্থ সংস্থার বিবরণ দেওয়া হলো:

কৃষি মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর কয়টি

কৃষি মন্ত্রণালয় অধিদপ্তর ০৭ টি, এছারা এর বিভিন্ন গষেষনা কেন্দ্র রয়েছে যা সম্পন্ন স্বতন্ত্র। তাই নিম্নে প্রধান কিছু আধিদপ্তর এবং এর বিস্তারিত দেওয়া হলো, এদের বিস্তারিত এবং গবেষনা কেন্দ্র গুলোর বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন..

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বিস্তারিত:

১. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৭৬
  • ঠিকানা: জয়দেবপুর, গাজীপুর, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ১,৫০০
  • উদ্দেশ্য: বাংলাদেশের কৃষির জন্য উন্নত প্রযুক্তি ও নতুন জাতের ফসল উদ্ভাবনের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা। বিএআরআই প্রধানত ফসলের নতুন জাত, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি এবং খামার ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিএআরআই-এর অধীনে কোন স্বতন্ত্র দপ্তর নেই, তবে এটি বিভিন্ন গবেষণা স্টেশন এবং কেন্দ্র পরিচালনা করে।
  • Website: barri.gov.bd

২. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৭০
  • ঠিকানা: জয়দেবপুর, গাজীপুর, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ১,২০০
  • উদ্দেশ্য: ধানের উৎপাদন ও উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা করা এবং দেশের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করা। বিআরআরআই ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন এবং ফসল ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিআরআরআই-এর অধীনে ১২টি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত।
  • Website: brri.gov.bd

৩. বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৬১
  • ঠিকানা: কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ১০,০০০
  • উদ্দেশ্য: দেশের কৃষি খাতে বিভিন্ন ইনপুট যেমন বীজ, সার, এবং সেচ সুবিধা সরবরাহ করা। বিএডিসি কৃষকদের জন্য সেচ, বীজ উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিএডিসি-এর অধীনে সার, সেচ এবং বীজ শাখা রয়েছে, যা এই তিনটি মূল সেবা প্রদান করে।
  • Website: badc.gov.bd

৪. বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৮২
  • ঠিকানা: ফার্মগেট, ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ২৫,০০০
  • উদ্দেশ্য: কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ, তথ্য সরবরাহ, এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির বিস্তার করা। ডিএই কৃষকদের মধ্যে উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি ও তথ্য পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: ডিএই-এর অধীনে ৬৪টি জেলা অফিস ও ৪৯০টি উপজেলা অফিস রয়েছে।

৫. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৮৪
  • ঠিকানা: ময়মনসিংহ, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ৫০০
  • উদ্দেশ্য: মৎস্য গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন, যা মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। বিএফআরআই মাছের নতুন জাত ও প্রজনন প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিএফআরআই-এর অধীনে বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে, যেমন মিঠাপানির মাছ গবেষণা কেন্দ্র।

৬. বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৮৪
  • ঠিকানা: সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ৬০০
  • উদ্দেশ্য: পশুসম্পদের উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে গবেষণা করা। বিএলআরআই পশু প্রজনন, খাদ্য, এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিএলআরআই-এর অধীনে পশুপালন গবেষণা কেন্দ্র এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।

৭. বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিডব্লিউএমআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৮০
  • ঠিকানা: নশিপুর, দিনাজপুর, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ৪০০
  • উদ্দেশ্য: গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবেষণা করা এবং উন্নত জাত ও প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিডব্লিউএমআরআই-এর অধীনে গম এবং ভুট্টা উৎপাদন গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।

৮. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই)

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৫১
  • ঠিকানা: মনিপুরীপাড়া, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ১,২০০
  • উদ্দেশ্য: পাটের উৎপাদন ও গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য গবেষণা এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা।
  • অধীনস্থ দপ্তর: বিজেআরআই-এর অধীনে ৮টি আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।

৯. বাংলাদেশ চা বোর্ড

  • প্রতিষ্ঠা সাল: ১৯৫৭
  • ঠিকানা: বন্দরবাজার, সিলেট, বাংলাদেশ
  • সদস্য সংখ্যা: প্রায় ৩০০
  • উদ্দেশ্য: চা উৎপাদন, রপ্তানি, এবং চাষের উন্নয়ন করা। বাংলাদেশ চা বোর্ড চা চাষীদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি সরবরাহ, এবং চা উৎপাদনের গুণগত মান উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে।
  • অধীনস্থ দপ্তর: চা বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (BTRI) রয়েছে।

বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয় এর অধীনস্থ এই দপ্তরগুলো দেশের কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, পাট এবং চা শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের নিরলস প্রচেষ্টা দেশের কৃষিখাতকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলছে। প্রতিটি দপ্তরই নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সরাসরি ভূমিকা রাখছে।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Scroll to Top