ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকার ফজলুল হক মুসলিম হল প্রাঙ্গণে একটি নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে, যা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তোফাজ্জল হোসেন একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ছিলেন, এবং তার প্রতি ঘটে যাওয়া এই নির্দয় আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ গভীরভাবে মর্মাহত।

এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পরেও চুপ কেন সমন্বয়ক’রা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনায়, যেখানে চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন যুবক তোফাজ্জল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তা নিয়ে প্রশাসনের সমন্বয়করা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নীরবতা পালন করছেন। এই নীরবতার পেছনে একটি বড় কারণ হতে পারে ছাত্র রাজনীতি এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মন্ত্রীদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ঘটনাটি কিভাবে ঘটল?

১৮ সেপ্টেম্বর রাতে, ফজলুল হক মুসলিম হলের গেটে তোফাজ্জল হোসেনকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে কিছু শিক্ষার্থী তাকে চোর সন্দেহে আটক করে। প্রাথমিকভাবে তাকে হলের মূল ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয় এবং মোবাইল চুরির অভিযোগে এলোপাতাড়ি চর থাপ্পড় ও কিলঘুষি মারা হয়। তোফাজ্জলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি তার নাম জানান এবং তার মানসিক সমস্যার কথা জানান। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে হলের ক্যান্টিনে নিয়ে খাবার খাওয়ানো হয়, তবে সেখানেই ঘটনা শেষ হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

খাবার খাওয়ানোর পর, তাকে আবারও হলের দক্ষিণ ভবনের গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জানালার সঙ্গে হাত বেঁধে হকিস্টিক, স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে আবারো বেধড়ক মারধর করা হয়। শিক্ষার্থীরা এতটাই নির্মম হয়ে ওঠে যে, মারধরের ফলে তার শরীর থেকে মাংস খুলে পড়তে থাকে। মারধরের এক পর্যায়ে তোফাজ্জল অচেতন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

এই নির্মম ঘটনার খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার পর, পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং অভিযুক্ত পাঁচজন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে। তার হলেন:-

নামপদবি/সাবেক পদবিভাগ
মোঃ জালাল মিয়াফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকপদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
সুমন মিয়াশিক্ষার্থীমৃতিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগ
মোঃ মুত্তাকিন সাকিনশিক্ষার্থীপুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট
আহসানুল্লাহশিক্ষার্থীগণিত বিভাগ
আল হোসেন সাজ্জাদশিক্ষার্থীভূগোল বিভাগ
ডিএমপির মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ তালিবুর রহমান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেট অফিসের সুপারভাইজার মোহাম্মদ আমানুল্লাহ। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে আটটার দিকে ফজলুল হক হলের গেটে তোফাজ্জলকে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করতে দেখে কিছু ছাত্র তাকে আটক করে এবং মোবাইল চুরির অভিযোগ তোলে। এরপরেই তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়, যা তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও বিচারপ্রক্রিয়া

  • সারা দেশে শোক এবং ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া।
  • সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে সুষ্ঠু বিচারের দাবি।
  • মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষের প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণের নিন্দা।

সমস্যার গভীরতা

  • মানসিক স্বাস্থ্য ও মানবিক আচরণের প্রতি অবহেলা।
  • তোফাজ্জল হোসেনের মানসিক সমস্যাকে উপেক্ষা করা।
  • এ ধরনের ঘটনা আইনের শাসনের ঘাটতি এবং বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

প্রয়োজনীয় সমাধান

  • মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন।
  • এমন অমানবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

শেষ কথা

  • তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যু পুরো জাতিকে শোকাহত করেছে।
  • মানবিকতা ও সহানুভূতির অভাব ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনে।
  • যথাযথ বিচার এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা রোধ করতে হবে।
  • এখন মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং মানবিক আচরণ নিশ্চিত করার সময়।

Leave a Comment

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Scroll to Top