ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় লিগ, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মেগা নিলাম অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সৌদি আরবের জেদ্দায়। আগামী কয়েকদিন ধরে চলবে এই নিলাম, যেখানে দলগুলো তাদের পছন্দের খেলোয়াড় কেনার জন্য লড়াই করবে। তবে মাঠের খেলার মতোই, এবার নিলামে মাঠের বাইরের কৌশল, ডেটা অ্যানালিটিকস ও প্রযুক্তির প্রভাব পড়তে চলেছে।
আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এবার ডেটা ও বিশ্লেষণ ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। রॉय্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর (আরসিবি) তাদের ক্রিকেট পরিচালক হিসেবে একজন ইংলিশ বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসেছে এবং তারা ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) সঙ্গে কাজ করা একটি অ্যানালিটিকস কোম্পানির সহায়তা নিচ্ছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স (কেকেআর) নিয়োগ করেছে আরেক ইংরেজ ডেটা বিশেষজ্ঞকে, এবং একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি তো আইবিএমের প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।
এমনকি, কিছু দল নিজেদের অভ্যন্তরীণ অ্যানালিটিকস টিম গঠন করে নিলামের আগে বেঙ্গালুরু ও দোহায় স্ট্র্যাটেজিক মিটিং করেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, এই সংখ্যা আর কৌশলভিত্তিক বিশ্লেষণ কি নিলামের চাপের পরিবেশে কার্যকর হবে?
আইপিএল নিলাম মানেই চমকপ্রদ মুহূর্ত, ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অনেক সময় অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত। উদাহরণ হিসেবে, ২০১৪ সালে রায়ান চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর তাদের ১৪ কোটি রুপির খেলোয়াড় যুবরাজ সিংকে ছেড়ে দেয়ার পর তাকে ফেরানোর চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই ১৫.৫ কোটি রুপি পর্যন্ত দর বাড়ায়। তবে, তাকে কিনতে ব্যর্থ হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও আলোচনা হয়।
অন্যদিকে, ২০২০ সালে চেন্নাই সুপার কিংস (সিএসকে) কেকেআরের কাছ থেকে ৪.২ কোটি রুপিতে পীযূষ চাওলাকে ট্রেড করতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে নিলামে তারা ৬.৭৫ কোটি রুপিতে তাকে কিনে। সিএসকে-র কর্মকর্তারা জানান, এমএস ধোনির নির্দেশে তারা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
২০০৯ সালের আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা হলো কলকাতা নাইট রাইডার্স ও কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের মধ্যে মাশরাফি মর্তুজাকে নিয়ে বিডিং যুদ্ধ। মাত্র ,০০০ থেকে শুরু হওয়া বিডিং গিয়ে ঠেকে ,০০০-এ। তবে সেই আসরে মাশরাফি মাত্র একটি ম্যাচ খেলেন।
এবারের নিলামে আলোচনার অন্যতম বিষয় হলো ধনী দলগুলো (যেমন পাঞ্জাব কিংস ও আরসিবি) তাদের সেরা খেলোয়াড়দের জন্য কত টাকা ব্যয় করবে। ধারণা করা হচ্ছে, সেরা তিন খেলোয়াড় কিনতে ৪৩ কোটি রুপির সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
একইসঙ্গে, প্লেয়ার এজেন্ট ও ম্যানেজারদের ভূমিকা এবারের নিলামে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। অতীতে বিদেশি খেলোয়াড়দের এজেন্টরা বেশি সক্রিয় থাকলেও এবার ভারতীয় এজেন্টদের ভূমিকা নিয়েও আলোচনা চলছে। এমনকি, কিছু খেলোয়াড় তাদের দল ধরে রাখার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন এজেন্টদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে।
নিলামের নতুন “রাইট টু ম্যাচ” (RTM) নিয়মও কৌশলে বড় ভূমিকা রাখছে। এই নিয়মে, কোনো দল নিলামে সর্বোচ্চ বিডের পরও সেই খেলোয়াড়কে কিনতে পারে পূর্বনির্ধারিত শর্তে।
সব প্রস্তুতি ও কৌশল সত্ত্বেও, নিলামের রুমে কী হবে তা কেউই আগাম বলতে পারে না। কিছু বিড যেমন আশ্চর্য করবে, তেমনি কিছু সিদ্ধান্ত সমালোচনার মুখে পড়বে। তবে নিলামের এই নাটকীয়তাই আইপিএলকে অন্য যেকোনো লিগের চেয়ে আলাদা করে তোলে।
স্বাগতম জেদ্দার আইপিএল মেগা নিলামে!