বর্তমানে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশে বড় আকারের ছাত্র আন্দোলনের ফলে সহিংস ঘটনা ঘটে, যেখানে শত শত মানুষ নিহত হয়। এই সহিংসতা ও গণবিক্ষোভের কারণে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে হয়। শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান কোথায় আছে- তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লির কাছাকাছি একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্ট বাতিল করেছে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার জন্য ভারত থেকে তার প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানিয়েছে। তবে, ভারত এখনো এ বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি এবং বিষয়টি নিয়ে কূটনৈতিক আলাপ চলমান আছে।
শেখ হাসিনাকে কি ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব?
শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা আইনীভাবে সম্ভব হলেও তা বেশ জটিল। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা আইনি প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে, এই চুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, যদি অভিযোগটি রাজনৈতিক প্রকৃতির হয়, তবে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়ায় ভারত বাধা দিতে পারে।
ভারত সরকার এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান “সুরক্ষার জন্যে” এবং এ বিষয়ে ভবিষ্যতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলমান। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের পরিবর্তে অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হতে পারে, কারণ ভারত শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ করলে তা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জটিল করতে পারে।
তাই, শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত আনার আইনী প্রক্রিয়া সম্ভব হলেও, রাজনৈতিক বাস্তবতা এই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।
আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ
শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তার বিরুদ্ধে চলমান রাজনৈতিক ও আইনী পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই প্রেক্ষাপটে কয়েকটি দৃষ্যমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে:
সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে আমাদের ফেসবুক পেজে যোগদান করতে পারেন..
নেতৃত্বের শূন্যতা ও দলে বিভক্তি
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল হিসেবে অবস্থান করছে। তবে, তার দেশত্যাগের পর দলের ভেতরে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যেহেতু শেখ হাসিনা দলের একক ও শক্তিশালী নেতা হিসেবে পরিচিত, তার অনুপস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে (যদিও গোপালগঞ্জ ব্যাতিত এ দলের নেতা কর্মিদের কোনো দৃষ্যমান অবস্থান নেই)। এতে দলটি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গিযেছে।
বর্তমানে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার সম্ভাবনা না থাকায়, এ দলটির প্রধান হিসাবে অনেক সময় অনেকের নাম সামনে আসতেছে। যদিও বর্তমানে কোন ঘটনার এ শক্ত দলিল নাই।
প্রতিরোধ ও পুনর্গঠন
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহাসিক দল এবং এর ভিত্তি বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে জড়িত। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, দলটি পুনর্গঠিত হয়ে নতুন নেতৃত্বের অধীনে রাজনৈতিক অঙ্গনে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে দলটি নতুন কৌশল ও মুখ নিয়ে জনসমর্থন পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন কিছুদিন আগে সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ কে আওমিলিগের সভাপতি করে দল পুণ গঠন কারর গুঞ্জন উঠেছিলো।
বিরোধী দলগুলোর উত্থান
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে বিরোধী দলগুলো, বিশেষত বিএনপি এবং জামায়াত, রাজনৈতিক ফাঁকফোকর পূরণ করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি সমালোচনামূলক মনোভাব থাকা বিরোধীরা শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলোকে সামনে তুলে ধরে নতুন রাজনৈতিক আন্দোলন তৈরি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও চাপ
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের একটি স্পর্শকাতর সময় চলছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎও ভারতসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হতে পারে, কারণ ভারত ও বাংলাদেশ পারস্পরিক সহযোগিতায় গভীরভাবে জড়িত। শেখ হাসিনার বর্তমান অবস্থান কোথায় আছে